• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

Tuesday, September 29, 2015

সুমিতেশ সরকার

সুমিতেশ সরকার

(কাব্যগ্রন্থ- ‘শুভেচ্ছা মমিঘর ছুঁয়ে’, ‘রাত্রি লিখিত সুসমাচার’ ,‘প্রতিবেশীদের জন্য কবিতা’, ‘স্বপ্নকোলাজ কিংবা লাজুক মুদ্রনপ্রমাদ’, ‘অগ্রন্থিত আলো-অন্ধকার’, ‘দশ লাইন স্তব্ধতা’, ‘সেই সব মিথ্যে কথা’, ‘ঘুমন্ত স্পর্শগুলি’, ‘স্তিমিত আলোর কারুকাজ’, ‘ বিষাদ রঙের তরজমা’, ‘ দু-এক মাত্রার খেলা’, ‘কয়েকটি ইশারামাত্র’, যে জায়গাটা কোথাও নেই’,...)

হারিয়ে যেতে হবে, খারিজ হয়ে যেতে হবে, একা সম্পূর্ণ একা হয়ে যেতে হবে-জীবনের এই নির্জনতম সত্যটা বোধহয় সুমিতেশ জেনে গেছিলেন বহু আগেই আর তাই মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে সুমিতেশ বলতেন- পৃথিবীটা প্রতিদিনই একটু একটু করে ছোটো হয়ে আসছে-অথচ এই ছোটো হয়ে আসা জীবনের আয়তনটাকেই তো বিগত দু দশকে তিনি তার নিজস্ব অক্ষরে অনুভবে যাপন করে গেলেন। নব্বইয়ের দশকে শুভেচ্ছা মমিঘর` ছুঁয়ে কাব্যগ্রন্থের মধ্যে দিয়ে সুমিতেশ সরকারের কবিতাযাপন শুরু বলা যেতে পারে এবং সেই গ্রন্থের চেকপোস্ট কবিতার শুরুতেই তিনি লিখেছিলেন- যে ভাষায় কথা বলছি আজ/ তার নাম বাংলাভাষা- শুরুর সেই দিন থেকেই সুমিতেশের কবিতার সেই ভাষা আসলে ছিল জীবনভাষা। একজন কবি তার জীবনভর ধরে হয়ত এই জীবন শব্দটার রহস্যময় হাতছানির কাছেই পায়চারী করে। সুমিতেশও করেছিলেন। কঠিন কর্কটরোগ তাকে বৃহত্তর বাস্তব থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ফিরে গেছে শর্তহীন কোনো এক অন্তর্লোকে আর তার কবিতায় ভাষায় কথায় রেখে গেছে জীবন নামের কিছু অসহায় দলা , কিছু মৃত্যুময় কঠিন বাস্তবেরই স্বোপলব্ধ ছবি।

তার স্বল্পআয়ুর মতই সচেতনভাবেই সুমিতেশ তার শব্দ, নৈঃশব্দকে লুকিয়ে রেখেছিলেন স্বল্পবাক্যের মাঝে। বড় কবিতা লিখতে চাইতেন না বরং খন্ড খন্ড মিতকথনের মধ্যে দিয়েই স্পর্ধা রাখতেন বড় একটা জীবনরহস্যকে উচ্চারণের। এই পরিমিতি এই মিতভাষের মাঝেই সুমিতেশের আনন্দ বেদনা বিচ্ছেদ প্রণয়, এই স্বল্পতা এই সহজতার মাঝেই তার বহুগ্রন্থিল আত্মপাঠ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আসলে সুমিতেশের  কবিতায় যেমন শব্দের দুর্লভ পশমী কোনো বুননী নেই তেমনি নেই তত্ত্বকথার ভিড় , কেবলমাত্র একটি সহজ সরল নির্ভার উপাদানের উপরই মূলত তার সামগ্রিক কবিতারা দাঁড়িয়ে।তার নিজের পংক্তি উদ্ধৃত করলে দেখা যাবে- মানুষ সারাজীবন যা লেখে/ তা তো একটি কবিতাই- এই একটি জীবনই অভীপ্সিত অন্বেষিত স্পষ্টবাক হয়ে উঠেছে কবি সুমিতেশ সরকারের কন্ঠস্বরে। সুমিতেশ সরকারকে আবিষ্কার করতে গিয়ে চোখে পড়ল আত্মপাঠ কবিতাটি। যেখানে সুমিতেশ লিখছেন-

আজ অন্য কাউকে পড়ব না
আজ নিজেকে পড়ব

আজ একটা অন্যরকম দিন

আজ আলো জ্বালব না
অন্ধকার জ্বালব না

সৎভাবে, একাগ্রভাবে, নিপুনভাবে
আজ শুধু নিজেকে, নিজেকেই পড়ব

একজন কবিকে পাঠকের চোখ দিয়ে আবিষ্কার করতে গিয়ে কবিতাটা একধরনের অনতিক্রমনীয় অনাবিষ্কারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে গেল আমায়। আমি কাকে খুঁজছিলাম? কবি তো নিজেই নিজেকে নতুনভাবে প্রত্যহ পড়তে চাইছেন, খুঁজতে চাইছেন স্ব আত্মার অন্তঃপুরটিকে। সত্যি তো আমরা কাকে খুঁজি! মৃত্যুর্ত্তীণ নয় জেনেও জীবনের মুনিয়াক্ষেত ভরিয়ে তুলি আয়োজনে আড়ম্বরে আর এখানেই সুমিতেশের মত একজন কবি কবিতার কৃশ আলোয় বারবার দেখাতে চেয়েছেন প্রতিটি মানুষই একা, বারবার উচ্চারণ করেছেন একটা অস্বচ্ছ আলো এসে পা রেখেছে/আমাদের সবুজ লতা গুল্ম ঘেরা উঠোনে।আসলে তার পংক্তিতে যাপনের তালগুলো ভিজানো রয়েছে ফেরার রঙে ; আসলে সুমিতেশের এই আত্মসমীক্ষণ একধরনের ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্ধিতা, যেখানে একজন কবি বারবার কুড়োতে চাইছেন তার নিজেরই ছেঁড়াছেঁড়া এলোমেলো অচেনা অনুপ্রাসগুলিকে। পৌঁছতে চাইছেন সেই শেষ পর্যন্ত। একটা জীবন আসলে একাকিত্বের ঝংকারে ভরপুর যেখানে কবি যেখানে একজন মানুষ আদতে শেষপর্যন্ত একা , যেখানে জীবনের প্রতিশব্দ খোঁজার পরিনামহীন খেলায় মেতে আছে একটি জীবনই । আর এখানে দাঁড়িয়েই সুমিতেশ সরকারের কবিতারা তার ব্যক্তিবিশ্ব খুঁজে চলেছে। তার লেখালিখি আসলে এক এক লাইন নিজেরই স্বীকারোক্তি, কিংবা তার নিজের কথায় একটা আলোছায়াময় আয়নার নিভৃতে নিজেকেই পুনরাবিষ্কার। বারবার ফিরে দেখা নিজেকে। কবিতা বা আর্টের কমপ্লেক্স স্টাকচারের বাইরে সুমিতেশের এই অনুভাবের জগত যাতে জড়তা নেই , যুক্তির সুরক্ষিত  বলয় নেই আর এই বাহুল্যবর্জিততাই কোথাও যেন কবি ও পাঠকের আঙুলকে পরস্পর পরস্পরের সাথে অনায়াসেই স্পর্শ করিয়েছে, এই অন্তরঙ্গ যোগযুক্ততাই ব্যক্তিক ভাষাকে করে তুলেছে বস্তুবিশ্বের আত্মীয়। সুমিতেশ সরকারের ছোটছোটো মেঘ ছোটোছোটো হাওয়া আর মেঘলা পাখির ঝাঁকে উঠে এসেছে একটি মানুষেরই জীবনসুভগ মুখচ্ছবি; সেখানে কোনো অমরত্ব বা আয়োজন নেই বরং মানুষের জীবনের আলো আঁধারী দ্যোতনাবাহী শব্দরাই উঠে এসেছে বারেবারে...

অনেকে হয়ত ষাটের কবি ভাস্কর চক্রবর্ত্তীর কাব্যছন্দ সুষমার সাথে সুমিতেশের মিল খোঁজেন এবং তাও হয়ত বিষন্নতা নির্লিপ্ততাকে তার শব্দের সহজ সাবলীল উপাদান করে তোলার জন্যই কিন্তু সুমিতেশের কবিতার সারাঘর জুড়ে নিঃশব্দ ঘাতকের মত যে শান্ত সমাহিত আশ্চর্য এক অন্ধকার ছড়িয়ে রয়েছে তা হয়ত জীবনবোধেরই ফসল। এবং শেষ দিকে রোগ, যন্ত্রনা, গাঢ় অ্যানাশেস্থিয়াই হয়ত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষকে এই নির্জন অভিযাত্রার শরিক করে তোলে আরো প্রবলভাবে। তার কবিতার সাথে অভ্যস্ত পাঠকসাধারন হয়ত জানে তার অক্ষরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা অন্ধকারের এই ক্রিয়েটিভ এক্সপোজারটি। একটি অনুচ্চারিত অনুভবকে লুকিয়ে রাখতেই বোধহয় সুমিতেশের কবিতারা সংক্ষেপিত হয়ে উঠেছে বারবার, বারবার জীবনের রাস্তা পেরোতে পেরোতে সেসব অক্ষরেরা যেন একটি হারিয়ে যাওয়া ফেলে আসা খুঁজে না পাওয়া গলি আবিষ্কার করেছে , চেনা শহরের বুকের ভেতর থেকেও যা অনেকখানি ফাঁকা, অনেকখানি পরবাসের। বারবার তার কবিতায় ফুটে উঠেছে শূন্যতারই এই ব্যক্তিগত নিভৃত অভীপ্সাটি। তিনি লিখেছেন-  শেষ পর্যন্ত পড়তে পারলাম না তোমাকে/তার আগেই ফুরিয়ে গেলাম/আর ফুরিয়ে যেতে যেতে দেখলাম/অন্ধকার চোখের জল, তুমি আবার রঙিন হয়ে উঠেছ- আসলে  সারজীবন ধরে সুমিতেশ যেন এই খুঁজে না পাওয়ার কাছেই আহত হয়ে বসে আছেন। সারাজীবন ধরে সুমিতেশের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে অপর এক সুমিতেশ যা কিনা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে বারবার জীবনের কথা জানতে চাইছে, বন্ধুতার কথা জানতে চাইছে, ছুঁতে চাইছে স্বপ্নঝোরার পাশে ফুটে থাকা লাইল্যাকটিকে কিংবা সাদা ম্যাকাওপাখিটির চিৎকারটিকে, অথচ কেউ আসছে না, রূপকথার মত একটিমাত্র মোমবাতি জ্বেলে দিতে আসছে না কেউ।  

এমনই এক অপেক্ষার নাম সুমিতেশ, না কোনো মরীচিকার নয় বরং আমাদের জীবনের ভিতরই ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি , তার কবিতারা, আসলে ওই না-বলা জীবনটা, কথা ভেসে ওঠার পর তার নিচের ভারী মৌনতাটিই ছিল তার অপেক্ষা। তার সার্বিক ভাষাপৃথিবীও জারিত হয়েছিল এমনই নীরবতারচিত কয়েক মূর্হুতে। হয়ত বিগত দু তিন দশকে তার কবিতায় এই একান্ত অস্মিতাই লুকিয়ে রেখেছিলেন সুমিতেশ, সেসব লুকোনো কথা হয়ত পাখিদের ডানার শব্দের মত কখনো ক্ষীণভাব বলতে চেয়েছিলেন অথবা জীবনভর ব্যাক্তিগত ছায়ার পরিকীর্ণ ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন তেমন কোনও বিষয় নেই-/ যা নিয়ে শুরু করতে পারি আবার/ তেমন কোনও বিষয় নেই-/যা নিয়ে দু লাইন কথাবার্তা হতে পারে/ শুধু নীরবতা...নীরবতা...নীরবতা.../নীরবতারচিত এক বৃষ্টিদৃশ্যের মধ্যে দিয়ে/ আমি আজ হেঁটে চলেছি /...



মনপবন

রাত্রি তো ফুরিয়ে এল। মনপবন, এবার তোমার ওই গুবগুবিটা
নিয়ে এসো। এসো, এই টিলার লালমাটির ওপর বসে গান গাই।
আমি গাই, তুমি বাজাও। সুর একটু এদিক-ওদিকে কি-ই বা
এসে যায়! আসল কথাটা হল ইচ্ছে...আসল কথাটা হল
একাত্মতা...আর হ্যাঁ, কাল সকালেই তো আবার চলে যেতে হবে।
তার আগে এসো, তোমার গুবগুবিটা নিয়ে বোসো একবার-
এই শাল, মহুয়া আর উৎসুক আকাশমণিদের
একটু গান শুনিয়ে যাই।

মৃত্যু থেকে কুড়ি মিনিট

মৃত্যু থেকে কুড়ি মিনিট দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছ তুমি
কিংবা
মৃত্যু তোমার থেকে কুড়ি মিনিট দূরত্বে...

এই কুড়ি মিনিট তুমি কীভাবে ব্যবহার করবে
তা তোমার ব্যাপার...

তুমি চাইলে, এই কুড়ি মিনিট
ধীরলয়ে গান গাইতে পারো
                 তুমি চাইলে, এই কুড়ি মিনিট
                 চিৎকার করে কাঁদতে পারো
তুমি চাইলে, এই কুড়ি মিনিট
চুপচাপ বসে থাকতে পারো...

তবে এ সবের আগে, তোমাকে মনে রাখতে হবে...
মৃত্যু থেকে কুড়ি মিনিট দূরত্বেই দাঁড়িয়ে রয়েছ তুমি
কিংবা
মৃত্যু তোমার থেকে কুড়ি মিনিট দূরত্বে দাঁড়িয়ে...


প্রতিশব্দ

পরিবর্তে
আমি সব মুছে দিয়ে যেতে চাইছি

পরিবর্তে
আমি বলে যেতে চাইছি -
না, এটা কোনও তরিকা নয়

কান্নার একটা প্রতিশব্দ খুঁজতে খুঁজতে
বিষাদের একটা প্রতিশব্দ খুঁজতে খুঁজতে
স্তব্ধতার একটা প্রতিশব্দ খুঁজতে খুঁজতে
                    আমি আজ এতদূর এসেছি...

তুমি আজ ফিরায়ে দিও না

বার্তা

কবিতার দ্বারা
আমি তেমন মহৎ কোনও কিছু করিনি

ভীরু নুডলসের মতো
জড়িয়ে যাওয়া, দলা পাকিয়ে যাওয়া,
ফ্যাকাশে অক্ষরগুলোর মধ্যে দিয়ে
আমি শুধু এক ব্যক্তিগত বার্তা
পৌঁছে দিতে চেয়েছি তোমার কাছে-

বন্ধ দরজার ওপার থেকে ভেসে আসা
শোকসংগীতের মতোই
যা করুণ, নিরালোক, বিষাদময় ।


মমি

ঘুম পায় না আজকাল ।
শুধু কথা বলতে ইচ্ছে করে।

নিজের মুখোমুখি
বসে থাকতে ইচ্ছে করে সারারাত ।

বহু কথা জমা হয়ে রয়েছে ভিতরে-
নদীর কথা,পাহাড়ের কথা, সমুদ্রের কথা...

কিন্তু সমুদ্রের ঢেউয়ের যে নীল
তা কীভাবে তুলে আনব এখানে-

পার্বত্য ধূসরতার যে প্রেক্ষিত
তা-ই বা কীভাবে রচনা করব-

নদীর যে অন্তর্গত ধ্বনি
সেই বা কীভাবে ছড়িয়ে দেব এই আলোছায়ায়-

এইসব ভাবতে ভাবতে তোমার ঘুমের ভিতর
ঢুকে পড়ি।

দেখি- কথা নেই। অন্ধকার মিউজিয়ামের ভিতর
দুটো ক্লান্তিহীন মমি
দুজন দুজনের চোখে চোখ রেখে মুখোমুখি বসে রয়েছে।




মেষপালক

ভিতরে ভিতরে একটা জ্বর ঘুরে বেড়ায়
আর একটা কালো আলোয়ান গায়ে
গুটিশুটি মেরে
আমি বিছানার ওপর বসে থাকি

দূরের আয়নায়
নিজেকে একজন বিষন্ন মেষপালকের মতো মনে হয়

সারাদিন চেষ্টার পরেও যার সঙ্গে খ্রিষ্টের দেখা হয়নি ।

আঁকার খাতা

একটি মূর্হুতও
একটি মূর্হুতের জন্য থেমে নেই

বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া বুদ্বুদ
থেমে নেই তোমার জন্য

হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া কান্না
থেমে নেই

এমনকী , দিনান্তে পুঞ্জীভূত নির্জনতাও
থেমে নেই আর-

কেউ পাখি, কেউ ঢেউ, কেউ দীপশিখা হয়ে
এখন আঁকার খাতায় ফুটে উঠছে ।

গ্রুপ ফটো

এবার আর কেউ দেখতে আসেনি আমাকে

ব্যালকনির ধারে যে ঘরটায় আমি শুই
তাতে রাস্তা থেকে উঠে আসা
ছোটো-বড়ো সমস্ত শব্দই শোনা যায়-

ঘর অন্ধকার করে, মাঝেমাঝে আমি সেই শব্দগুলো শুনি-
ওই দ্যাখো, গুল্লু-গুল্লু বলে চেঁচিয়ে উঠল কেউ
ওই দ্যাখো, সোনামন-সোনামন বলে কেউ কাউকে ডেকে উঠল

যদিও কয়েক মূর্হুত আগে পর্যন্ত
গুল্লু-সোনামন...এরা কেউই এ জীবনে ছিল না
তবু, কী আশ্চর্য দ্যাখো-কালবৈশাখীর প্রথম বৃষ্টির মতো
গুল্লু,সোনামন এরা সকলেই ঢুকে পড়ল কবিতায় ...

আসলে, জীবন এরকমই-
বহুদিন পর খুঁজে পাওয়া সাদা কালো পুরোনো ছবির মতো
যাতে চেনা যাচ্ছে না- কিন্তু তুমি-আমি-গুল্লু-সোনামন... সবাই রয়েছি ।


একটু সাদা জায়গা

একটু সাদা জায়গা রাখলাম -
তুমি ছবি আঁকবে

দু একটি পত্রপুষ্প, দু একটি কোমলগান্ধার
দু-একটি অস্তাচল...

আর জানবে, অস্তাচলের ঠিক নীচে দাড়িয়ে থাকা
ওই লোকটিই তোমার বাবা

একটু উশকোখুশকো, একটু ধূলিধূসর, একটু বোকাসোকা...

অন্ধকার আর একটু গাঢ় হয়ে এলে
যাকে আর দেখা যাবে না ।

ঘনশ্যাম

কবিতা বলতে তুমি কী বোঝ ঘনশ্যাম
তোমার স্ত্রীই বা কী বোঝেন

যে কোনও কবিতার উত্তরে তোমার ওই রহস্যময় হাসি
অদ্ভুত লাগে আমার

যে কোনও কবিতার উত্তরে তোমার ওই চিরায়ত মৌনতা
অদ্ভুত লাগে আমার

যে কোনও কবিতার উত্তরে তোমার ওই নিরুচ্চার চাহনি
অদ্ভুত লাগে আমার

আর জানতে ইচ্ছে করে,
কবিতা বলতে ঠিক কী বোঝ তুমি
তোমার স্ত্রী-পুত্র-পরিবার- এরাই বা কী বোঝেন ...

খোঁজ

বহুদিন ধরে
তুমি লোকটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছ

আর লোকটাও খুঁজে বেড়াচ্ছে তোমাকে-

শেয়ারমার্কেট, চায়না টাউন, বিগবাজার ...
সর্বত্রই তোমরা দুজন দুজনকে খুঁজছ

যদিও, লোকটাকে তুমি চেন না
আর লোকটাও চেনে না তোমাকে

তবু বহুবছর ধরে,
লোকটা তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে
আর তুমিও খুঁজে বেড়াচ্ছ লোকটাকে !

আত্মপাঠ

আজ অন্য কাউকে নয়,
আজ নিজেকে পড়ব

আজ একটা অন্যরকম দিন

আজ আর আলো জ্বালব না
অন্ধকার জ্বালব না
সৎভাবে,একাগ্রভাবে,নিপুণভাবে
আজ শুধু নিজেকে, নিজেকেই পড়ব ।

প্রেম

গোধূলির অন্ধকার জলে স্বপ্ন ভেসে যাচ্ছে

আর
কাটা হাত ছুঁতে চাইছে কাটা হাতকে
থ্যাঁতলানো আঙুল ছুঁতে চাইছে থ্যাঁতলানো আঙুলকে
ক্রুশবিদ্ধ আলো ছুঁতে চাইছে ক্রুশবিদ্ধ আলোকে

গোধূলির অন্ধকার জলে স্বপ্ন ভেসে যাচ্ছে-
গোধূলির অন্ধকার জলে
             অসম্পূর্ণ, অসমাপ্ত চুম্বনগুলি ভেসে যাচ্ছে ...



একটি সিদ্ধান্ত

পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ
একটি কবিতা লেখা

পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ
হাজার লোকের মজমায়  দাঁড়িয়ে
                    স্বীকার করে নেওয়া -
না, আমি কোনও কবি নই !

পোড়া তামাকের গন্ধ

পোড়া তামাকের গন্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর আমি অনুভব করছি মৃত্যু এই। লেখালিখি-বিষয়ক আমার সংক্ষিপ্ত কথাবার্তার ভিতর যার উপস্থিতি এখন কালো মেঘের মতো ছড়িয়ে পড়ছে।আর জানুয়ারির শেষ সন্ধ্যায় আমি প্রত্যক্ষ করছি সেইসব বৃষ্টিবিন্দু- যা তোমাকে ছোঁয়নি কখনও। যেন নিতান্ত সৌজন্যমূলক একটি হত্যাদৃশ্যের ভিতর থেকে এভাবেই বেরিয়ে আসছে সুরের রোশনাই- যেন নিতান্ত সৌজন্যমূলক একটি ক্যানভাসের ভিতর থেকে এভাবেই বেরিয়ে আসছে আলোর হররা... । সবুজ আঙরাখার ভিতর থেকে, বিনিদ্র চোলির ভিতর থেকে যেন এভাবেই বেরিয়ে আসছে অবসাদ, কান্না ও পাপার্ত স্বপ্নসমূহ। যা আমি উপেক্ষা করতে পারছি না, দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি না, মুছে ফেলতে পারছি না- ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে আমার, যতিচিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছে আর অন্ধকার এক আয়নার সামনে দাড়িয়ে আমি নওশাদ-নওশাদ বলে চিৎকার করে যাচ্ছি। যে আসবার কথা ছিল,অথচ আসেনি- যে এসেছিল, অথচ হারিয়ে গিয়েছে- যে হারিয়ে গিয়েছে, অথচ যার মুখ স্পষ্ট এখনও...

এখনও মানে যতক্ষণ না আবছায়া চিৎকারে ভরে উঠছে রাত্রি, যতক্ষণ না রক্তাক্ত চাঁদ দিঘির কিনারে এসে আছড়ে পড়ছে আর তিরতিরে জলস্রোত বয়ে যেতে যেতে আচমকা থমকে দাঁড়াচ্ছে করোটির ভিতর। আর আমি চাইছি,অনন্ত শূন্যতা তোমাকে আর একবার রচনা করতে। যে মাঠে ফসল নাই... সেই ঊষর প্রান্তর, আর একবার ছুঁয়ে দেখতে। বিষাদমগ্ন তুলি ও কুয়াশার যৌথ মহড়ার ভিতর ভোরের শিউলি হয়ে ঝরে পড়তে ...

যদিও পোড়া তামাকের গন্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর আমি অনুভব করছি মৃত্যু এই। লেখালিখি-বিষয়ক আমার সংক্ষিপ্ত কথাবার্তার ভিতর যার উপস্থিতি এখন কালো মেঘের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ, তা আমি উপেক্ষা করতে পারছি না, দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি না,মুছে ফেলতে পারছিনা - ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে আমার, যতিচিহ্ন হারিয়ে যাচ্ছে আর অন্ধকার এক আয়নার সামনে দাড়িয়ে আমি নওশাদ-নওশাদ বলে চিৎকার করে যাচ্ছি ...



একটি বেড়াল, রিংকুমাসি ও কিছু অনিশ্চয়তা

স্তব্ধতার ভিতর দিয়ে একটি বেড়াল চলে যায়
আর আচমকাই রিংকুমাসির কথা মনে পড়ে

ভাবি তোমার সঙ্গে দেখা হলে এসমস্তই বলব

কিন্তু কবে- কীভাবে দেখা হবে, তার কিছুই জানি না

ইচ্ছে করে না , তাই

ইচ্ছে করে না, তাই এখন আর যাই না
বায়োস্কোপে যাই না, ফুটবল-মাঠে যাই না, অপেরায় যাই না

এখন শুধু ঘরে বসে থাকি
কুলকুন্ডলিনী জাগাই, হৃদিপদ্ম জাগাই,সুষুন্মা জাগাই...

আর নিজের ভিতরের ওঁ-কে জাগ্রত করি

নিজের ভিতরের ওঁ-কে
গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিই, তোমার ওঁ-এর ভিতর

নিজের ভিতরের আমাকে
গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিই তোমার অমার ভিতর

নিজের ভিতরের জলোচ্ছ্বাসকে
গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিই তোমার জলোচ্ছ্বাসের ভিতর

হৃদয় নির্ভার হয়ে আসে
তরুলতা নির্ভার হয়ে আসে
দুর্বাদল নির্ভার হয়ে আসে...

শিমূল-তুলোর মতো ভেসে বেড়াতে থাকি
নিষ্পাপ মেঘের মতো ভেসে বেড়াতে থাকি
অলীক স্বপ্নের মতো ভেসে বেড়াতে থাকি

আর ভাসতে ভাসতে
কুলকুন্ডলিনী জাগাই,হৃদিপদ্ম জাগাই,সুষুন্মা জাগাই

আর ওঁ, নিজের ভিতরের ওঁ-কে জাগ্রত করি !



ব্রিজ

তোমার সঙ্গে দেখা হবার আগে
একটা জীবন ছিল আমার

তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর
একটা জীবন

দু-দুটো জীবনের মাঝখানে
                   একটা ভেঙে পড়া ব্রিজ-
মরচে ধরা রেলিং, সবুজ আগাছা
দু-একটা নাম না-জানা ফুল ...

কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া যে ব্রিজের ছবি
তুমি কাল স্বপ্নে দেখেছ ।

অন্যথা

সচরাচর যেভাবে ভাবি, আজ এইখানে
তার কিঞ্চিৎ অন্যথা হল

ফলে, শূন্যতা...
শূন্যতা সৃষ্টি হল একটা

শূন্যতা...
যার ভিতর তোমার পছন্দসই কথাবার্তাগুলো
তুমি বসিয়ে নিতে পার এবার।





My Blogger Tricks

1 comment:

  1. সুমিতেশ সরকারের চ্যাকপোস্ট কবিতাটি চাইছিলাম। ওর জন্ম সাল ও প্রয়াণ সাল দরকার। আমার হোয়াটসঅ্যাপ নং 9674719399 জরুরি বিষয়

    ReplyDelete