• কবিতা সুর্মা


    কবি কবিতা আর কবিতার কাজল-লতা জুড়ে যে আলো-অন্ধকার তার নিজস্ব পুনর্লিখন।


    সম্পাদনায় - উমাপদ কর
  • সাক্ষাৎকার


    এই বিভাগে পাবেন এক বা একাধিক কবির সাক্ষাৎকার। নিয়েছেন আরেক কবি, বা কবিতার মগ্ন পাঠক। বাঁধাগতের বাইরে কিছু কথাবার্তা, যা চিন্তাভাবনার দিগন্তকে ফুটো করে দিতে চায়।


    সম্পাদনায়ঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
  • গল্পনা


    গল্প নয়। গল্পের সংজ্ঞাকে প্রশ্ন করতে চায় এই বিভাগ। প্রতিটি সংখ্যায় আপনারা পাবেন এমন এক পাঠবস্তু, যা প্রচলিতকে থামিয়ে দেয়, এবং নতুনের পথ দেখিয়ে দেয়।


    সম্পাদনায়ঃ অর্ক চট্টোপাধ্যায়
  • হারানো কবিতাগুলো - রমিতের জানালায়


    আমাদের পাঠকরা এই বিভাগটির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বারবার। এক নিবিষ্ট খনকের মতো রমিত দে, বাংলা কবিতার বিস্মৃত ও অবহেলিত মণিমুক্তোগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছেন, ও আমাদের গর্বিত করছেন।


    সম্পাদনায় - রমিত দে
  • কবিতা ভাষান


    ভাষা। সে কি কবিতার অন্তরায়, নাকি সহায়? ভাষান্তর। সে কি হয় কবিতার? কবিতা কি ভেসে যায় এক ভাষা থেকে আরেকে? জানতে হলে এই বিভাগটিতে আসতেই হবে আপনাকে।


    সম্পাদনায় - শৌভিক দে সরকার
  • অন্য ভাষার কবিতা


    আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভাষার কবিতা সমৃদ্ধ হয় আরেক ভাষার কবিতায়। আমরা বিশ্বাস করি সৎ ও পরিশ্রমী অনুবাদ পারে আমাদের হীনমন্যতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরটি সম্পর্কে সজাগ করে দিতে।


    সম্পাদনায় - অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
  • এ মাসের কবি


    মাসের ব্যাপারটা অজুহাত মাত্র। তারিখ কোনো বিষয়ই নয় এই বিভাগে। আসলে আমরা আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কবিকে নিজেদের মনোভাব জানাতে চাই। একটা সংখ্যায় আমরা একজনকে একটু সিংহাসনে বসাতে চাই। আশা করি, কেউ কিছু মনে করবেন না।


    সম্পাদনায় - নীলাব্জ চক্রবর্তী
  • পাঠম্যানিয়ার পেরিস্কোপ


    সমালোচনা সাহিত্য এখন স্তুতি আর নিন্দার আখড়ায় পর্যবসিত। গোষ্ঠীবদ্ধতার চরমতম রূপ সেখানে চোখে পড়ে। গ্রন্থসমালোচনার এই বিভাগটিতে আমরা একটু সততার আশ্বাস পেতে চাই, পেতে চাই খোলা হাওয়ার আমেজ।


    সম্পাদনায় - সব্যসাচী হাজরা
  • দৃশ্যত


    ছবি আর কবিতার ভেদ কি মুছে ফেলতে চান, পাঠক? কিন্তু কেন? ওরা তো আলাদা হয়েই বেশ আছে। কবি কিছু নিচ্ছেন ক্যানভাস থেকে, শিল্পী কিছু নিচ্ছেন অক্ষরমালা থেকে। চক্ষুকর্ণের এই বিনিময়, আহা, শাশ্বত হোক।


    সম্পাদনায় - অমিত বিশ্বাস

Wednesday, September 30, 2015

সম্পাদকীয়

সমীরণ মজুমদারের সঙ্গে আমার আলাপ ২০০৪ সালে, কবিতার সূত্রেই। অমৃতলোক-এ কবিতা লিখতে চায়না, এমন তরুণ কবি সম্ভবত বিরল ছিলেন আমাদের দেশে সেই সময়। আমিও পাঠিয়েছিলাম। সমীরণদার কবিতাবিশ্বাস অন্যরকম ছিল, কিন্তু সেই কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল। উনি সোৎসাহে ফোন করেছিলেন। একটা অসম বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল। সেই বন্ধুত্ব আমাকে যতটা দিয়েছে, আমি ওঁকে সেই সাপেক্ষে কিছুই দিতে পারিনি। জলের সমোচ্চশীলতা আর কী!
            গদ্য লেখার কোনো ইচ্ছে বা মানসিকতা আমার সেই অর্থে ছিলনা। সমীরণদা আমাকে লেখালেন। কবি ভাস্কর চক্রবর্তী যেদিন মারা গেলেন, ভাস্কর আমার প্রাণের কবি ছিলেন, ঠিক সেদিনই আমি ভাস্করের উপরে একটি প্রবন্ধ লিখলাম, এবং সেদিনই ক্যুরিয়ার করলাম। লেখাটা হাতে পাওয়ার পরে সমীরণদাকে উচ্ছ্বসিত দেখতে পেলাম। ফোন করে প্রায় একঘন্টা কথা বললেন। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। এরপর তো অমৃতলোক-এর একেকটা সংখ্যায় ৩-৪টি গদ্যও লিখেছি। প্রচুর ভারি-ভারি অনুবাদ করেছি।
অমৃতলোক-এ হাল্কা লেখার জায়গা ছিল কম। অনেক লেখক ওই কারনেও ক্ষুন্ন ও আহত হয়েছেন লেখা পাঠিয়ে। অনেক নামী লেখক। লিটল ম্যাগাজিন যে সো কলড বানিজ্যিক পত্রিকার বাপ হতে পারে, অমৃতলোক দেখিয়ে দিয়েছে। লিটল ম্যাগ বানিজ্যিক পত্রিকার বাইপ্রোডাক্ট নয়, বরং নেমেসিস। হয়ত এই কারনেই দেখতাম কেউ কেউ অমৃতলোককে লিটল ম্যাগ মনে করতেন না, কারন অত অর্থ ব্যয় করে, অতখানি মাপ নিয়ে দাপট নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটি পত্রিকার প্রকাশ তাঁদের অস্বস্তি দিত, হীনমন্যতা দিত। একেকটা সংখ্যা প্রকাশ করার জন্য সমীরণ-দা প্রভিডেন্ড ফান্ড ঋণ নিয়েছেন, সেই টাকা ফেরত আসেনি। বাস্তবিক, ঘাম আর রক্ত দিয়েই কাগজ চালাতেন উনি।
আমার প্রতি পক্ষপাতিত্বের সীমা ছিলনা। কিন্তু বকাবকিও খেয়েছি। উনি বকতেন, কারন অনেক সময় ওঁর মনে হত আমি কোনো গদ্যকে রি-রাইট করিনা। আর আমার বিশ্বাস ছিল একটা গদ্য দ্বিতীয়বার লিখলে সেটা অনেক ত্রুটিমুক্ত হয় বটে, কিন্তু তার প্রাণটায় টান পড়ে। তখন একটা সিটিং-এ একটা গদ্য লিখতাম। আজ পারিনা। আজ একটা গদ্য লিখতে অনেক সময় একমাস লেগে যায়। ঘসামাজা করি। আজ সমীরণদা জিতে গেছেন। আমার কবিতা সমর্থন করতেন বলে মনে হয়না। আবার আমাকে দিয়েই অমৃতলোক-এর কবিতা বিভাগ সম্পাদনা করাতেন, আলাদা সম্পাদকীয়সহ। হাতেখড়ি বলা যায়।
            সম্পাদনার অনেক কিছুই ওঁর থেকে শেখা। চোখের সামনে গড়ে উঠতে দেখেছি একের পর এক সংখ্যাকে। শেষ যে কয়েকটি সংখ্যা করেছিলেন, চিন্ময় গুহ সংখ্যা, রবীন্দ্র সংখ্যা, বিবেকানন্দ সংখ্যা... সেগুলো বাংলা সাহিত্যের চিরসম্পদ। সবুজপত্র সংখ্যা-র কাজ চলছিল। খবর পেয়েছি ওঁর মৃত্যুর সুযোগে কেউ সেই সংখ্যার প্রায় সম্পূর্ণ প্রুফ চুরি করে নিয়েছে। খবর পেয়েছি ওঁর বইপত্তর এবং দুষ্প্রাপ্য কিছু সংগ্রহ চুরির পরিকল্পনাও নাকি হয়েছিল, ওঁর মৃত্যুর সময়ে অনেকেই ভিড় করেছিলেন যাদের সমীরণ মজুমদার পছন্দ করতেন না, ওঁর মৃত্যুতে তাঁদের কিছু সুবিধাই হবে, অশিক্ষার আবহাওয়াটা আরো জাঁকিয়ে বসবে। সমীরণ অশিক্ষার শত্রু ছিলেন। সেই কারনেও অনেকের অপছন্দের ও অস্বস্তির পাত্র ছিলেন। জীবনের শেষের দিনগুলো পুরোপুরি একাই কাটিয়ে গেলেন। মদে ডুবে গিয়েছিলেন, সেটা সবাই দেখত, লোকটার বুকের চামড়া তুলে একটাও উঁকি কেউ দিলেন না। একটা সামাজিক দায়বোধ থেকেই ওঁর দায়িত্ব নেওয়াটা ওঁর শহরের লিটল ম্যাগ কর্মীদের উচিত ছিল। তাঁরা সেটা করলেন না।
অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত মানতে পারিনিঅমিতাভ সমাজপতির ফিরোজা-র মতো উপন্যাস নিয়ে উনি ক্রোড়পত্র করলেন, একটি নড়বরে উপন্যাস, আমি মানতে পারিনি। নন্দীগ্রামের সময়ে একের পর এক সরকার বিরোধী সংখ্যা করলেন। আমি মানতে পারিনি। লিখেছিলাম। কিন্তু মনে হয়েছিল অমৃতলোক সাহিত্যপত্রিকা হিসেবে নিজের ভূমিকা থেকে সরে যাবে কেন! লোকনীতি তো তার কাজ নয়! প্রতিবাদ অবশ্যই হোক, কিন্তু একটা সংখ্যাতেই হোক। এসব বললে সমীরণদা রেগে যেতেন। নিজের নীতি ও জীবনদর্শন ছাড়া আর কোনো উগ্রতা ওঁর মধ্যে আমি দেখিনি। নিজের নিয়মে বাঁচতেন। মদ্যপান করলে ভেতরের সবটুকু আবেগ বাইরে বেরিয়ে আসত, সেইসময় ওঁর মুখোমুখি হওয়া ঠিক ততটাই কঠিন হত যতটা সোজা ছিল ওঁকে ভুল বোঝা। অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে পারেননি মানুষটি তাই।
            হ্যাঁ, সমীরণদাকে রাগানো ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সোজা কাজ। অত্যন্ত কোপন ছিলেন। আমার সঙ্গে কথা বন্ধ হয়েছে, আবার দ্বিগুণ টানে কথাও হয়েছে। বাড়িতে নেমন্তন্ন করে খাইয়েছেন বহুবার। আমি যে মাছ পছন্দ করিনা, সেটা খেয়াল রাখতেন। বন্যাপরিস্থিতি অতিক্রম করে আমার মেয়ের অন্নপ্রাশনে এসেছেন। ওঁর ভালোবাসা যে অল্প কয়েকজন পেয়েছেন, আমি তাঁদের একজন। এটা আমার সৌভাগ্য মনে করি। আমিও খুব অল্প মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে পেরেছি জীবনে। আমি যখন যেতাম আমাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যেতেন, নিজে টুকটাক রান্নাও করতেন রান্নার মহিলাটিকে সরিয়ে। ওঁর বাজারের প্রশংসা করলে, রান্নার সুখ্যাতি করলে শিশুর মতো খুশি হতেন। পাতে কিছু ফেলে রেখে উঠে যাওয়া চলত না।
            আমার কোনো গুরু নেই। কিছু গুরুজন আছেনতাঁদের একজন চলে গেলেন। আমি একটু একা হয়ে গেলাম, আরো। আর এই সময়টা রিক্ত হয়ে গেল, কারন অমৃতলোক আর নেই, সম্ভবত।
            বাক্ ৯৩ সমীরণ মজুমদারকেই উৎসর্গ করলাম। মেদিনীপুরের সেই রাগী অদ্ভুত বেমানান লোকটিকে। চিয়ার্স সমীরণদা, আমি মদ খাওয়া চিরতরে ছেড়ে দিয়েছি, তবু... চিয়ার্স!!!!


অনুপম মুখোপাধ্যায়
            (
পরিচালক বাক্ )
           

            

বিশ্বরূপ দে সরকার

আয়না বাগান

পাগল করবে জানি হো হো করবে
সম্পর্ক টপকে গেলে গাছে গাছে ঈর্ষা ফুটবে
আলতো হরিণ তলে চিবুকের বাড়ি
কথা মেরামত করে করে তবেই সুপ্রভাত
কিংবদন্তী,  গল্পের ভেতর যথারীতি
আপেল গাছের অপমান ছাপা হবে
আঙুল দিয়ে বানানো আরও একটা শরৎকাল
চিকন হাই তুলবে
তার কোন গ্রামার থাকবে না...

  
পেনসিলের সাদা সমাস
জবাকুসুম মানে পূবদিক
পশ্চিম ভিজে যাওয়া ঘুম
আকুলি বিকুলির হৃৎপিণ্ড
হাওয়া নেইসঁপে দেওয়া জল
চিবিয়ে নামছে মিউজিয়াম
একা থাকা জলসেচ
বুঝিয়ে সুঝিয়ে সমুদ্রখাত
ওভারিতে
চকডাস্টার ও মাফলার
৪৫০ কোটি বছর পর আবার সেই নাভিপথ
ব্রহ্মাণ্ড বেয়ে বেয়ে উঠছে
গন্ধ বাহক পিঁপড়েছেলেমেয়ে
যেন সহজ গমন
যেন চুম্বন দিতে যাচ্ছে নক্ষত্রে
পায়ে পায়ে কালো ঘৃণা
একলক্ষ বছরের আলজিভ
চোখের নিচে যুদ্ধরূপকোমরের মাতৃ রূপ নিয়ে
হিমবাহ থেকে শতক পেরিয়েহাড়মাংস পেরিয়ে
চুল্লির ভেতর ঢুকে আবার খণ্ড খণ্ড বৈষ্ণব
টুকরো টুকরো শাক্তএকদলা হজরত বেরিয়ে আবার...
আধপোড়া বাবার মাংসনদীতে ভাসিয়ে
অকর্মণ্য পুত্রের হাত তবেই রেজিস্ট্রি হচ্ছে
অনিদ্রার গাছে গাছে
চণ্ডাশোকবিলি করা শাণিত অপ্রেম
স্নেহ হারিয়েঘুণাক্ষর হারিয়ে
প্রতিটি রোমকূপে চৈত্র কণা
যদি একটা তালপাখা হত
যদি কেউ পূর্ণ বর্ষাকাল
মালকোষে ভিজে যেত হাড়মাস
প্রচুর তুমি যা শেখাবে
গত শতাব্দীর মনে পড়া মেয়েমানুষ
হে বৈকুণ্ঠহে আগুনে ঝলসানো কাঠবেড়ালি
লাফানোর রাস্তা বাতলাও
বলো তত্ত্বকথাকত ডেসিবেলে নদী বাজলে
এই টিফিন কেরিয়ার ভরে দেবে
ক্ষীরের বিদ্যুৎ আর ছানার নিউরোন
কবিতা চিনবে না...

  
ননসেন্স
হাঁসের গা কোনো মামুলি সন্ধ্যে নয়
যে জিজ্ঞাসা গড়িয়ে নামবে
হতে পারে জলটান একটা স্ফূর্তি
শীতবোধ নিরীহ দুঃখে কাঁপে ...
দু একবার উপত্যকাও আগ্রহ রেখেছে
অণ্ডকোষ পৃথিবীতে বর্ষাকাল ভালোবাসে
বেঁচে থাকা মানে তবে রতিতবে কুসুম বনের এলিজি
অনিদ্রা ভিজে গেলে কী লাভ বলো
ঝড় থেমে গেলে...
সুন্দরের বিক্ষোভ তাহলে ট্যাবলেট নির্ভর
দ্যাখো বেসিনের ওপর আজ ঝুঁকে আছে
আমাদের নেশাকুলকুচিগুলি...





Tuesday, September 29, 2015

ইন্দ্রনীল ঘোষ

শারদীয়

বেজে উঠছে আসমানী গারদ
ভিখিরিটা শেষ অবদি ঘড়িতে গিয়ে গলায় দড়ি দিলো!
এখন ঘড়ি ঘোরে
            দড়ি দোলে
                        ভিখিরির পকেট থেকে পড়ে যায় জমানো কয়েন...

যেন কেউ চাবি দিতে ভুলে গেছে দীর্ঘ এই খামারে
যেন তুমি নৌকো চালাতে পারোনি কখনো

সমস্ত শস্যদানা ঘুমিয়ে রয়েছে ফসল তোলার দিকে




মিতুল দত্ত

আমাদের কালো সাম্যগান

১৭

ঘটকবাড়ির দিকে তিন পায়ে খাড়া হয়ে আছ
ভোরের চৌহদ্দিতার ভেতরে যে অম্লশূল
শুয়ে আছেপ্রস্তাব তাদের কানে পৌঁছতে পারেনি
ঘটা ঘটা বর্ষার রচনা
মুখস্থ করাই কাজঅথচ পরীক্ষাহলে
শরতের মাদারি কা খেল 
এসব ঢ্যামনামো দেখে বড়ো হচ্ছ
মানতাসার রাজ্যে তুমি আকাট বামন
দক্ষিণে তোমার মুখ
উত্তরে পশ্চিমে তুমি শুয়ে
দোদোমা ফাটাচ্ছে পুবে তোমার বন্ধুরা


১৮

ঋতুই এসেছেনাকি জোব্বায় জড়ানো
বালিহাঁসকলকাতার রাস্তাঘাটে
এসব দেখাচ্ছগলে যাওয়া আইসক্রিম
চেটে নিচ্ছগঙ্গার মুহূর্ত মনে পড়ে যাবে বলে
আমি ঢেকুর তুলিনিকেলেঙ্কারি-দিনে
ছাতাও খুলিনিওগো সানস্ক্রিন সানস্ক্রিন
সাইকেলের আঁত নিয়ে প্রশ্ন ছিল
অনুপম কত রাস্তার ম্যাজিক নিয়ে
আমাদের কথাবার্তা থেমে গেছে
বেড়াল পেরিয়ে যাচ্ছে কালোদিন
আমাদের কালো সাম্যগান




তৈমুর খান

দুটি কবিতা

চলো ইক্ষুক্ষেতের পাশে বসি

আলোচনা বন্ধ থাকুক
চলো , ইক্ষুক্ষেতের পাশে বসি
কত ছায়া ভেসে ওঠে বাতাসে ভেসে যায় স্বর
আমাদের বিকেলের জ্বর অন্ধকারে শয্যা পেতে রাখে
পরস্পর কেঁপে উঠি
যদিও মায়াগান গেয়ে ওঠে রাত্রির পাড়া
হাঁস হয়ে উড়ে যায় অলৌকিক সিনেমার মেয়েরা
এইসব দৃশ্য থেকে নিজেদের বিষয় আশয় চিনে নিই
আর শূন্যতার হ্রদে স্নান সারা হলে
এই মাঠে আমাদের পুরাতন সম্পর্কগুলি খুঁজি

ইক্ষুক্ষেতে কারা এত ডাকে  ?
রাজনীতির শেয়ালেরা ক্রমশ হিংস্র হয়ে ওঠে
কাকপক্ষীরাও আলো-আঁধারির সংস্কৃতির ভেতরে ডুবে যায়

আমরা চুপচাপ নীরব বন্ধুত্বে জেগে থাকি
অবিশ্বাস আর আতঙ্কের রাতের চাঁদ দেখি


প্রজারা

সব প্রজারা প্রজাপতি হয়ে উড়ছে
রাজা নীল মেঘ , তার সহচরী
আশ্বিন মাস
শান্ত দিঘির পাড়ে রোদ্দুরের নিবেদন
আলো ফেলেছে  , কী সুন্দর বাঁশি
সব মনের বাতায়ন খুলে ডাকছে শিউলি
প্রেম যে এপথেই ডাকে , সতর্কতা কখনো মানে না
উৎসবের ঘ্রাণ পায় , বিকেলে বেড়াতে বেরোয়
নদীতে বাগানে পাহাড়ে ভ্রমণ

এসময় আদ্র হয়ে উঠি
হ্রদের নীচে মর্মর কল্লোল
অদৃশ্য দাঁতের হাসি দ্যুতিময়
পাহারা ভেদ করে ছুটে আসে
প্রজারা উচ্ছ্বাসের শিহরন পায়
জলে নামে   আর জলের উপর মনকে ভাসায়



অনিন্দ্য রায়

 

শ্রেণির দু-চাকা মাংস (১ম পর্ব)  

প্রকৃতি ইন্টার্ন, দেখবো আরেকবার
শালপাতা ছোটো মনে হবে
       উত্তেজনা এতো তরবারি
পুস্তক চৌচির, রোজগেরে, ভাড়া থেকে
রান্না থেকে কলহের আমন্ত্রণ পাই
প্রকাশ্য, আদুর, নলকূপ
দেখবো শর্করাশ্রেণি
পিপীলিকা এবং নিষ্ফল

বন্ধুর বাইশ কোপ, টুকরো আনাজপাতি নার্সিং করি
রজনি নামের রাত, শয্যা টিউশন যদি আজই হয়
ত্রা হয়, নৌকো হয়  
ডিম ভেঙে ভোরের মিটিং, অসভ্যতা ততক্ষণে মশারি তোলেনি



   

মলয় রায়চৌধুরী

কবিতা যোনির মতো

উজাড় জঙ্গলের ফেলে-যাওয়া কান্নায়
কবিতা বিশ্লেষণ করে টের পাই
যিনি লিখেছেন কবিতা তাঁরই
ব্র্যাণ্ডেড যোনির মতো
ইনফিডেল আলোচক আমি
সারা গায়ে ফুলের আড়তের ঝিমোনো হলুদ মেখে
ফোঁকা চুরুটের রক্তমাখা অবশেষ কার্পেট থেকে তুলে
টাকা গোনবার যন্ত্রে নিজের ফরফরে হিদেনত্ব মাপি
কবরের তলা থেকে ডাক আসে
গ্যাসে নীল সিলভিয়া প্লাথের বিমূর্ত উন্মাদ যোনি
ওনার কবিতাগুলো ওনার যোনির মতো
স্বীকৃতিমূলক যোনি অ্যানে সেক্সটন গোলাপি পরাগমাখা
ওনার কবিতাগুলো ওনার যোনির মতো
অ্যামি লাওয়েলের ছোট্টো ব্রিটেনের ইমেজিস্ট যোনি
ওনার কবিতাগুলো ওনার যোনির মতো
মারিয়ান ম্যূরের আধুনিকবাদী যোনি
ওনার কবিতাগুলো ওনার যোনির মতো
ফিশ অ্যান্ড চিপসের ধ্রুপদি ব্রিটিশ যোনি এমিলি ব্রন্টের
ওনার কবিতাগুলো ওনার যোনির মতো
ক্রিস্টিনা রসেটির ইতালি-বিলেতি  পাস্তা যোনি
ওনার কবিতাগুলো ওনার যোনির মতো
অ্যালিস টোকলাস যোনি শ্যাম্পেনে গারট্রুড স্টিন
ওনার কবিতাগুলো ওনার যোনির মতো
যে রহস্য  আমার মতন লুচ্চা-লাফাঙ্গার নেশাড়ু মগজে ঘাই মারে
কোনো আলোচক আর সেসব বোঝে না
কেন যে তারুণ্যে স্বমেহন করিনি এনাদের বিশ্বজয়ী যোনির কথা ভেবে
ভুগতে পারলুম না  হায় ওনাদের কামড়ের জলাতঙ্কবিষে
কবিতা লেখার হাত খুলে যেতো
সিগারেট লাইটারের অলটার-ইকো ক্লিকে
আমার নোংরা কথা পাশ ফিরে শুনে তুমি বলে উঠলে
আর কোনো বাঙালি কবির শব যিশুবাদী গোরে গিয়েছে কি
দুপাশে দুহাত রেখে শোয়নাকো বাক্সবন্দী হয়ে কোনো যিশুবাদী কবি
এখন তো যত্তোসব টির‌্যানোসরাস রেক্স
শ্মশানফেরতদের ভোদকা কান্নায় ডোবা অন্ত্যমিল গান
মাটি-খড় দিয়ে তৈরি দেবীদের ট্রাকে তুলে আমিও চেল্লাই
যোনি মাই কি জয়
ঘুমের ওষুধ খেয়ে প্রতিরাতে
জলতল প্রবালের অজস্র নরম ঠোঁট দুঃস্বপ্নে এসে চেপে ধরে
পচা খড় পচা বাঁশ খুবলোনো ঠোঁট আর নাক



পলাশ দে

শিস

ঘড়ি না পরলেও তোমার ওইসব হবে

মোম হবে, সমুদ্র ঝাঁকাবে
বন্ধু কোনো শব্দই না অপেক্ষা ছাড়া

অ্যাক্সিডেন্টের ঘ্রাণ তোমার
সেন্টের চেয়েও লাজুক
তোর কানের থেকেও দেয়াল গড়াচ্ছে হিমে

এই যে চুপ আপনি কান্না বাজাচ্ছেন
বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে

আর কেউ কেউ সেরে উঠছে, শিস দিচ্ছে



বল

বল ভেবে খেলতে যাচ্ছে হাত, গুড়ুম
আঙুল কাঁপছে স্তন ভেবে, মর্মর

তিরিশ বছরের ডাস্টবিন পচতে পচতে
আবার রজঃস্বলা ...ভাদ্রঘ্রাণ

ভুল করে ফেলে রাখা আধখাওয়া দুপুর
ইচ্ছে করে লুকিয়ে রাখা ফোঁপানি

এসবের ওপরে ভনভন করছে কাক ...উড়ছে ফড়িং

শিরোনামে উঠে আসা বিস্ফোরণের খবর,
সত্যি নয়। বিশ্বাস করো। সত্যি